আজ ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস

২০২৪ সালের এই দিনে ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব গণবিস্ফোরণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশ ত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের।
এই অভ্যুত্থান পরবর্তীতে ‘৩৬ জুলাই’ নামে পরিচিতি পায়, যা আজ জাতীয়ভাবে উদ্যাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলা ও গ্রামে-গঞ্জে পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে দিবসটি।
সকাল ৯টায় দেশের ৬৪ জেলায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে’ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে স্মৃতিস্তম্ভগুলোতে।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শুরু হয়েছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’। মূল মঞ্চের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। সাউন্ড, লাইটিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।
আজ বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে দিবসটির অন্যতম কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান। সেখানে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ ড্রোন শো। রাত ৮টায় পরিবেশিত হবে দেশের খ্যাতনামা ব্যান্ডদলগুলোর অংশগ্রহণে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, “বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের এই দিনে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং বিজয় অর্জন করে। এই অভ্যুত্থান ছিল গুম, খুন, দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এর লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাইয়ের চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। আমি প্রত্যাশা করি, এই গণ-অভ্যুত্থান দেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক উত্তরণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, “জুলাই আমাদের দেখিয়েছে আশার আলো। এটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায় ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের সূচনা করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, তা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এখনও পতিত স্বৈরাচার ও তার লুটেরা গোষ্ঠী দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দল-মত নির্বিশেষে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে।”
“আসুন,” তিনি আহ্বান জানান, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদী অপশাসনের ঠাঁই থাকবে না।”
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নিজ নিজভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। র্যালি, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে দোয়া—বিভিন্ন আয়োজনে মুখর সারাদেশ।