উত্তরের খেপ: বগুড়ার কড়চাঃবগুড়া নামটির সাথে পরিচয় শৈশব

উত্তরের খেপ: বগুড়ার কড়চা
বগুড়া নামটির সাথে পরিচয় শৈশব থেকেই। হাওরে আমাদের বোরো জমিতে বিরুইয়ের মতো দেখতে ‘বগুড়া‘ নামের দেশি জাতের ধান চাষ করা হতো। ধানটি আগাম পাকত। চৈত্রের শেষ বা বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে। বগুড়ার চালের পান্তাভাত ছিল খুব মজার। আমাদের পাড়ার এক মিলিটারি কাকার কর্মস্থল ছিল বগুড়ায়। তিনি অল্প বয়সী একটি মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিলেন। বগুড়ার কাকীর বয়স হয়তো ছিল ১৪/১৫। এটি ছিল কাকার তৃতীয় ও শেষ বিয়ে। এগুলো ৪২-৪৪ বছর আগের কথা।”
বগুড়ার কথা উঠলেই ভেসে উঠে আমাদের শিক্ষক ড. খালেকুজ্জামান ইলিয়াস স্যারের মুখ। তাঁর ভাই আখতারজ্জামান ইলিয়াস স্বাধীনতা উত্তর বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক। ইলিয়াসের দ্বিতীয় ও শেষ উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’। খোয়াবনামায় ফুটে উঠেছে বাঙালির আবহমান সংগ্রাম তথা এগিয়ে যাওয়ার গল্প। উপন্যাসের মূল উপজীব্য ফকির-সন্যাসী বিদ্রোহ, আসামের ভূমিকম্পে ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে জনজীবনে প্রভাব, তেভাগা আন্দোলন, ১৩৫০ (১৯৪৩ খ্রি) এর দুর্ভিক্ষ, পাকিস্তান আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশত্যাগ ও রিফিউজিদের আগমন, জমিদারি ও সামন্ত প্রথার আওতায় গ্রামীণ অর্থনীতির বিবর্তন ইত্যাদি। উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে বগুড়ার কাৎলাহার বিলের উপকণ্ঠের দুতিনটি গ্রামের জনজীবন। বস্তুত খোয়াবনামা উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্যোচিত একটি শ্রেষ্ঠ আখ্যান।
গত শুক্রবার সেহরির পর ৫ টা ৫০ এর বাসে রওনা করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই বগুড়া পৌঁছলাম। পথে ঘুম ভেঙেছিল মোবাইল বেজে উঠার পর। ডিজি মহোদয়ের ফোন। বাস তখন এলেঙ্গা পার হয়েছে। সামনে যমুনা সেতু। বাম পাশে রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এ জায়গাটায় চমৎকার একটি আমের বাগান। ২০/২৫টি ঝোপওয়ালা মাঝারি সাইজের গাছের সবগুলো মুকুলে ভরে আছে: ‘মা তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে…..।’ সামনে এগোলে অনেকগুলো খেজুর গাছ। বাস এগোয়। বাস আরো এগোয়। সেতুর নিচে যমুনা নদীর পৃথক দুটি ধারা। প্রথমটিই প্রধান। মাঝে সুপ্রশস্ত চর। নদীর দিকে তাকালে হৃদয় ভেঙে যায়।
সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় পার হয়ে আবার ঘুম। ঘুম যখন ভাঙল তখন বাস যাত্রাবিরতি শেষে চলতে শুরু করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারলাম জায়গাটি চান্দাইকোনা। দুই জেলার সীমান্ত: পাবনার (সিরাজগঞ্জের) চান্দাইকোনা আর বগুড়ার চান্দাইকোনা। এখান থেকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা শুরু। চার লেনের রাস্তার দুপাশে ফসলের মাঠ এখন গাঢ় সবুজ। খেতে কচি ধানের বাড়ন্ত চারাগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
শেরপুর পার হয়ে শাহজাহানপুর উপজেলা তারপর সদর। বনানীর হক পেট্রোল পাম্পে নেমে পড়ি। হানিফের বাসটির গন্তব্য গাইবান্ধা। বগুড়ার অফিসার মাহফুজ ও তার উচ্চমান সহকারী জুলফিকার মোঃ আব্দুর রউফ। সাহেব গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন পাম্পে। সাত মাথার দিকে এগোয় গাড়ি। শুক্রবার বন্ধের দিন তারপরও রাস্তায় ভিড়। ব্যাপার কি?
নিবন্ধন পরীক্ষা চলছে, মাহফুজ জানালেন। সময় নিয়েই বগুড়া এসেছি। সাথে সহকর্মী চয়নের আসার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে যাত্রা বাতিল করে সে।
বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী বলা হয়। প্রধান শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সাতমাথা শহরের কেন্দ্রস্থলেই। জায়গাটিকে ঢাকার একটি ব্যস্ত ইন্টারসেকশনের সাথেই তুলনা করা চলে। আশপাশের অবকাঠামোও সেরকমই।
সার্কিট হাউসে ব্যাগ বোচকা রেখে বেরোই। জুমার নামাজের ব্যবস্থা হয় যে মসজিদে তার নাম বাইতুর রহমান মসজিদ। বেশ বড়। আগে এখানে বাস টার্মিনাল ছিল। বয়স্ক খতিব সাহেবের বয়ান খুব একটা বুঝে উঠতে পারিনি বগুড়ার অ্যাকসেন্টে বলছিলেন বলে। মসজিদের পাশে নির্মিত হচ্ছে প্রেসক্লাব ভবন।
তথ্য অফিসটি জলেশ্বরীতলার হাফিজার রহমান সড়কে। অফিস পরিদর্শন শেষে অপরাহ্নে রওনা হই মহাস্থানগড়ের উদ্দেশ্যে। এখানে আগেও গিয়েছি। প্রথমবার গিয়েছিলাম ২০০২ সালে। গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ইফতেখার হোসেন স্যারের সঙ্গে।
২০০৮ সালে বগুড়ায় খুবই সংক্ষিপ্ত সফরের কথা মনে পড়ে। মঙ্গা মোকাবেলায় উপদেষ্টা পরিষদের (ক্যাবিনেট) একটি সভা হয়েছিল রংপুরে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সফরসঙ্গী হিসেবে আমরা যাত্রাবিরতি করেছিলাম বগুড়ায়। সার্কিট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে অন্যান্য আইটেমের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়েছিল স্টিকি (আঠালো) আলুভর্তা। খেতে বসে ডিসি এই আলুভর্তা নিয়ে গর্ব করছিলেন। শুকনা মরিচ পুড়িয়ে বানানো এরকম স্বাদের আলুভর্তা আর কখনো খাইনি। সেবার পাকিস্তানের এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী ‘বগুড়ার মোহাম্মদ আলী’র বাড়ি পরিদর্শন করেছিলাম। সে বাড়িতে সে আমলে ব্যবহৃত পোলোর বোর্ড দেখেছিলাম। সেবার রংপুরে গোটা উত্তরবঙ্গসহ ঢাকার এত বেশি রাজকর্মচারী জড়ো হয়েছিল যে, আমাদের রাতযাপন করতে হয়েছিল নীলফামারি সার্কিট হাউসে।
বিকেলে মহাস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা করি। শহর থেকে বের হতে গিয়ে হাতের ডানে পড়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজ। প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৩৯। বগুড়া জেলা স্কুল (১৮৫২), বগুড়া ভিএম গার্লস স্কুল (১৮৬৯) এর তুলনায় কলেজ প্রতিষ্ঠা যথেষ্ট বিলম্বই বলা চলে। সে সময়ের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আজিজুল হকের নামে কলেজের নামকরণ করা হয়। আজিজুল হক বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য, বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ও প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। নিবন্ধনের পরীক্ষা চলছিল বলে ক্যাম্পাসের খুব বেশি দূর যেতে পারিনি। উচ্চমাধ্যমিক শাখাটি মূল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্ন। এ কলেজের ছাত্ররা বুয়েট-মেডিকেলে প্রচুর চান্স পায়। গতবছর সম্ভবত বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল আজিজুলের ছাত্র।
কলেজের কাছেই বগুড়া রেলস্টেশন। গুরুত্বপূর্ণ নগরীর স্টেশনের ছাল-চামড়া নেই। মাহফুজ জানায়, ঢাকা থেকে রংপুর ও লালমনিরহাটগামী ট্রেন বগুড়ায় থামে। তবে কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস দিনাজপুরের পার্বতীপুর হয়ে চলে যায়। বগুড়ার দুঃখ ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ ভালো নয়। (রাজশাহীর) নাটোর, পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকায় যেতে অনেক সময় লাগে। বগুড়া থেকে নাটোরের দূরত্বই ৮৬ কিলোমিটার। তবে আশার কথা, সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া সরাসরি রেললাইন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে বলে জানা গেছে।
বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক বেশ প্রশস্ত। সিক্স লেন হাইওয়ে। রংপুরগামী সড়ক ধরে এগোলে ১২ কিলো পরে হাতের বামে পড়বে মহাস্থান বাজার। মহাসড়ক থেকে বামে নেমে যেতে হবে। মহাস্থান বাজার থাকবে বামে। এখান থেকেই শুরু মহাস্থানগড় এলাকা। জায়গাটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। প্রথমেই পড়বে বেশ উঁচুতে শাহ সুলতান বলখী মাহী সওয়ারের মাজার। মাজার কমপ্লেক্সটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। পুরো চত্বর টাইলস করা হয়েছে। মাজারের কিচেনে রান্না চলছে ভক্তদের জন্য। প্রাঙ্গণে গাছপালা আছে ভালোই। জায়গাটি শান্তিময়। মাজারের পাশে একটি মসজিদ। এটি নাকি ৩০০ বছরের পুরাতন। মাজারের প্রবেশমুখে কতগুলো কটকটির (মিষ্টান্ন) দোকান। মহাস্থানের কটকটি নামকরা। দাম জিজ্ঞেস করলে দোকানি জানায়, ২৪০ টাকা কেজি। এখান থেকে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম যেদিকেই তাকানো যায় চোখে পড়ে বিক্ষিপ্ত উচু ভিটা। বটগাছও চোখে পড়বে। বটের শিকড় গাছ থেকে নেমেছে। আরো দূরে দেখবেন ইটের প্রাচীর।
মাহফুজ জানালেন, প্রাচীন আমলে এটি ছিল মৌয সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহরের ধ্বংসাবশেষ। এটি ছিল একটি প্রাদেশিক রাজধানী। বাংলার রাজধানী। মৌযদের মূল রাজধানী ছিল পাটুলিপুত্র অর্থাৎ বিহারের পাটনায়।
খ্রিষ্টের জন্মের কয়েক শ বছর আগে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা এ নগরের নাম পুণ্ড্রবর্ধন। এখন শুধুই মহাস্থানগড়। মহাস্থান মানে পবিত্রভূমি। গড় মানে দুর্গ। পুরো এলাকাটি ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সমতল ভূমি থেকে দুর্গের দেয়ালের উচ্চতা ১৫ থেকে ৪৫ ফুট। এই দেয়ালের প্রস্থও স্থানভেদে ৫ থেকে ১০ ফুট । এ প্রাচীর দেখলে চীনের মহাপ্রাচীরের কথা মনে পড়ে। মহাস্থানের প্রাচীর দেখে মনে হয় প্রতিরক্ষার জন্যই শক্ত প্রাচীরের ব্যবস্থা। এটি ছিল দুর্গনগরী। সৈন্যসামন্তরাই নিশ্চয়ই থাকত এরকম নগরে।
মহাস্থানগড়ের পাশেই ক্ষীণকায়া একটি খাল দেখিয়ে মাহফুজ বলল, স্যার এটিই করতোয় নদী। করতোয়া নদী দেখতে চাই এ কথা আগেই বলে রেখেছিলাম। নদীর ক্ষীণধারা দেখে বড়ো মায়া হলো। এত নাম আর এই চেহারা নদীর! আড়াই হাজার বছর আগে হয়তো এমন ছিল না। নিশ্চয়ই নগরীর সৈন্যসামন্ত তথা অধিবাসীদের জন্য খাদ্য ও রসদ নিয়ে বড়ো বড়ো নৌযান ভিড়ত এ নগরের ঘাটে।
কোনো কোনে বিবরণে বলা হয়েছে পুন্ড্রবর্ধন ছিল প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ জনপদ। পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল পুন্ড্রনগর। কেউ কেউ মনে করেন, এ স্থানটি বৌদ্ধশিক্ষার একটি কেন্দ্র ছিল। চীন ও তিব্বতের অনেক বৌদ্ধ সন্যাসী পড়াশুনা করতে আসতেন এখানে।
২০১৬ সালে মহাস্থানগড়কে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করা হলেও তার প্রভাব খুব একটা চোখে পড়ল না। মহাস্থানগড়ের অংশ হিসেবে আরো যেসব স্থাপনা বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে সেগুলো হলো: গোকুল মেধ বা বেহুলা লক্ষীন্দরের বাসরঘর, খোদার পাথর ভিটা, শীলাদেবীর ঘাট, গোবিন্দভিটা, ভাসু বিহার, পরশুরামের প্রাসাদ, ভীমের জাঙ্গাল ইত্যাদি।
রোজার দিন। ততক্ষণে চারটার বেশি বেজে গেছে। মহাস্থানগড়ের জাদুঘর বন্ধ হয়ে গেছে। পাশেই গোবিন্দভিটার প্রত্নতত্বের জাদুঘরটি তখনো খোলা ছিল। কুড়ি টাকা করে টিকেট কিনে ঢুকতে হয়। বিশাল ঢিবির ওপর প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ল। সেটি ঘুরে ফিরে দেখা হলো। নিচে করতোয়ার ক্ষীণ নদী। ভিটায় উচু নিচু পথ। সাবধানে হাঁটতে হয়। সাইন রয়েছে: ‘এখানে অশালীন কাজ নিষেধ।’ লক্ষ্য করি সামান্য একটু আড়ালে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে ছিল অল্পবয়সী দুটি ছেলে-মেয়ে। ছেলেটি বড়জোর কলেজে পড়ে আর মেয়েটিও স্কুলছাত্রী হতে পারে। তারা আপত্তিজনক অবস্থায়ই মিতস্ক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিল।
মাহফুজ জানাল,বগুড়া শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র। শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে বগুড়া উত্তরবঙ্গের শীর্ষে। সন্তানদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে আশপাশের জেলাগুলোর লোকজন এখানে সপরিবারে থাকতে পছন্দ করেন। শিল্প-কারখানা ও সার্ভিস সেক্টরের ভালো অবস্থার কারণেও সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, রংপুর ও কুড়িগ্রামের বহু মানুষ বসত গড়েছে। বগুড়া একটি কর্মচঞ্চল শহর। একাধিক টাইলস ফ্যাক্টরি চোখে পড়ল রাস্তার পাশে। টিএমএসএস বড়ো এনজিও। রয়েছে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজসহ নানা ধরনের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। টিএমএসএস হাসপাতালটিও নামকরা। এর স্থাপনা দেখা হলো রাস্তার পাশে।
তথ্য অফিসে ইফতারের পর মাহফুজের সঙ্গে হাঁটতে বেরোই। আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল সন্ধ্যায় মোমো ইনে আমাকে নিয়ে কফি খাবে। সে আহ্বান পরিত্যাগ করে মাহফুজকে বিদায় জানিয়ে জলেশ্বরীতলা এলাকার শপিং মলের দিকে এগোই। মনে হলো পশ্চিমা একটি শহরে সন্ধ্যা কাটাচ্ছি। শহরের সড়ক বাতিগুলোর ঔজ্জ্বল্য চমৎকার। শপিং মলের দেয়ালগুলো ঝকঝকে রং করা। ভেতরে চমৎকার আলো। দোকানের তরুণ-তরুণী সেলসপার্সনগুলোও কথা-বার্তা আচার-আচরণে স্মার্ট।
কোনোক্রমেই মনে হবে না ঢাকার বাইরে আছি- বরং মনে হবে বিদেশে আছি। রাস্তার ব্যস্ত মানুষ দেখে মনেই হয় না যে এটি ঢাকার বাইরের কোনো অংশ। আবাসিক এলাকাও সুন্দর। নতুন নতুন হাইরাইজ বিল্ডিং উঠছে। মাহফুজ তার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট দেখাল। বগুড়ার রাস্তাঘাট যথেষ্ট পরিষ্কার। ঢাকার চেয়ে তো বটেই। রাতে ঘুম ভাঙার পর রুমের বাইরে বেরোই। পযাপ্ত এলইডি লাইটের স্নিগ্ধ আলোয় ভেসে যাচ্ছে সার্কিট হাউস চত্বরে। বাইরেও তাই। বড়ো মায়াময় নগরী বলে মনে হলো। দেশ আসলেই এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নত বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়।
পরদিন আমার গন্তব্য গাইবান্ধা। আমাকে গোবিন্দগঞ্জ পার করে লক্ষীপুর ব্রিজ পযন্ত পৌছে দেয় বগুড়ার গাড়ি। গোবিন্দগঞ্জ গাইবান্ধার একটি উপজেলা। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। বগুড়া-রংপুর হাইওয়ে যথেষ্ট প্রশস্ত হলেও রাস্তার গোবিন্দগঞ্জ বাজারের ভেতরের অংশটুকু আগের মতোই সরু। লোকজন জমির দখল ছাড়তে নারাজ। ফলে এখানে যানজট লেগেই থাকে। বাইপাস বা ওভারপাস ছাড়া মনে হয় সমাধান হবে না। গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি ব্রিজের নিচের করতোয়া নদী দেখে ভালো লাগল। নদী এখানে যথেষ্ট প্রশস্ত। নদীর তীরে মাঠে খেলাধুলায় মত্ত ছেলেদের সাথে কথা হয়। নদী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চায় আমাদের সঙ্গী রউফ সাহেব।
-এ নদী কেউ বন্দোবস্ত দিতে পারবে না। দিতে চাইলেও কেউ নেবে না।
- মাছ আছে? নদীতে?
-এ নদীতে রুই ও বোয়াল মাছ ধরা পড়ে। তিন সাড়ে তিন কেজি ওজনের।
বগুড়া ফেলে এসেছি অনেক আগেই। চব্বিশ ঘণ্টার সফরটি মনে থাকবে অনেকদিন। - লেখক: মো: ইয়াকুব আলী, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, ঢাকা ।