পড়াশোনা,খেলাধুলা-দু’টোই প্রয়োজন,দু’টোই তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখবে

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেছেন, মাদক থেকে তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথম কাজ হচ্ছে সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করা, আর তার সূচনা হতে হবে খেলাধুলার মাধ্যমে। গতকাল বুধবার খানজাহান আলী থানাধীন সোনালী জুট মিলস্ ও কেডিএ এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা বকুল আরও বলেন, আমি বিস্মিত হই যখন দেখি স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মাঠ বন্ধ করে দেয়। খেলাধুলার মাঠ বন্ধ করে দিলে আমাদের সন্তানদের সুস্থ বিকাশ হবে কীভাবে? খেলাধুলা না থাকলে তরুণরা অটোমেটিক ভাবে মাদকের দিকে ধাবিত হবে।
বকুল স্কুল প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, “অবিলম্বে মাঠ খুলে দিতে হবে। প্রয়োজনে আমি নিজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকলে সুস্থ প্রজন্ম গড়া সম্ভব নয়।
তিনি এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তিনটি ব্যাচের ফুটবল জার্সি প্রদানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আগে পড়াশোনা, তারপর খেলাধুলা-দু’টোই প্রয়োজন। কারণ এই দু’টোই তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখবে।”
বিএনপি এই নেতা আরও বলেন, “খুলনার শিল্পাঞ্চল পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার শুধু কলকারখানা বন্ধই করেনি, যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে দরজা-জানলা পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে। এর ফলে হাজারো শ্রমিক আজ কর্মহীন, মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে ইজি বাইক বা রিকশা চালিয়ে বেঁচে আছে, অথচ তাদের কর্মসংস্থানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শ্রমিকদের ইজিবাইক বা রিকশা চালানো বন্ধ করতে দেওয়া হবে না। তা হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।” করোনা মহামারির সময় বিএনপি’র ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে বকুল বলেন, “ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতেও বিএনপি কর্মীরা জনগণের পাশে ছিল-অক্সিজেন সিলিন্ডার, খাদ্য ও ওষুধ বিতরণ করেছে। তখন কেউ ভোট চাইতে আসেনি। আজও আমি ভোট চাইতে আসিনি; এসেছি জনগণের পাশে দাঁড়াতে।”
আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগামী ফেব্র“য়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার। যাকে ভোট দেবেন, কাজ না করলে তার জবাবদিহি চাইতে পারবেন। কিন্তু যাদের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি, তাদের কাছে জবাবদিহি নেই।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “একটি চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছে যাতে নির্বাচন না হয়, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
বকুল আরও ঘোষণা দেন, “আমাদের ৩১ দফা কর্মসূচির মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ রাখা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারে একটি ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও একটি ‘হেলথ কার্ড’ দেওয়া হবে। ফ্যামিলি কার্ড দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা যাবে এবং হেলথ কার্ড দেখিয়ে হাসপাতালে বিনা টিকিটে চিকিৎসা নেওয়া যাবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আল্লাহ যদি বিএনপিকে দায়িত্ব দেন, খুলনা-৩ আসনে প্রথম কাজ হবে বন্ধ কলকারখানা পুনরায় চালু করা এবং দ্বিতীয় কাজ হবে একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করা যেখানে শ্রমিকরা সহজে চিকিৎসা সেবা পাবেন।”
সভা শেষে তিনি বলেন, “আমরা ১৭ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি, অনেক রক্ত দিয়েছি। শেখ হাসিনা যেমন পালিয়ে গিয়েছিল, প্রয়োজনে আমরাও রাজপথে নামব। তারেক রহমান যদি ডাক দেন রাজপথে নামতে প্রস্তুত আছি ইনশাআল্লাহ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র সভাপতি কাজি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ হাওলাদার আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মোল্লা সোহাগ, ইকবাল হোসেন মিজান, ইঞ্জিঃ নুর ইসলাম বাচ্চু, কাজি জলিল, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম রফিক ও ডাঃ রইস উদ্দিন প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি ও সোনালী জুট মিলস্ কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ সরদার এবং সঞ্চালনা করেন রাসেল মাহমুদ। এর আগে বিকেল ৩টায় রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনা মহানগর ওলামা দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মোঃ আবু নাইম, হাফেজ মোঃ আল আমিন, মাওলানা মোঃ মানজারুল ইসলাম ও কাজী মোঃ সোলায়মান।smk