
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তাহলে সেটির নাম হবে ‘মন্থা’। এই নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড, যার অর্থ ‘সুন্দর ফুল। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি রোববার দুপুর নাগাদ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল।
ভারত মহাসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, সেগুলোর নাম আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। পর্যায়ক্রমে এবার থাইল্যান্ডের দেওয়া নাম অনুসারে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে।
উত্তর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার প্যানেলে রয়েছে ১৩টি দেশ। তারাই এসব নামকরণ করে। দেশগুলো হলো, বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন।
আবহাওয়াবিদ মোঃ ওমর ফারুক শনিবার রাতে বলেন, “নিম্নচাপটি আজ (শনিবার) মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এরপর কাল (রোববার) দুপুরের দিকে এটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে।”
এই ঘূর্ণিঝড়ের তেমন প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, “সমুদ্রপথে এর তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে স্থলভাগে এর প্রভাবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।,
সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ইতোমধ্যে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডেকান ক্রনিকেল জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় দেশটির অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাদা উপকূলে আছড়ে পড়বে। ওই সময় মন্থার ঝড়োবাতাসের গতিবেগ থাকবে ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।
আইএমডি সর্বশেষ আপডেটে আরও জানিয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটি ৭ কিলোমিটার গতিতে আরও পূর্বদিকে সরেছে এবং আন্দামান ও নিকোবারের কাছের ব্লেয়ার বন্দর থেকে ৪৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব, বিশাখাপত্তম থেকে ৯৭০ দক্ষিণপূর্ব, চেন্নাই থেকে ৯৭০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণপূর্ব, কাকিনাদা থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্ব এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে ১০৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।,
ধারণা করা হচ্ছে, নিম্নচাপটি পশ্চিম উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দিকে সরে যাবে। রোববার এটি গভীর নিম্নচাপ ও পরের দিন সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এরপর ঝড়টি উত্তরপশ্চিমদিকে সরে গিয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে যাবে এবং ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে এটি কাকিনাদা উপকূল অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।# smk