বাগেরহাটে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট সভা ও সচেতনতামূলক প্রচারণা
বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি যা শিশুদের শৈশব, শিক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশে এখনও বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক প্রথা ও দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিবাহ প্রচলিত আছে।
গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু এন্ড চাইল্ড ম্যারিজ (জিপিইসিএম)-৩য় ধাপ প্রকল্পের আওতায় জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) এবং কনসার্ণ উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট (CWFD) এর সহায়তায় শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে একত্রিত করে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, মেয়েদের শিক্ষার প্রচার এবং জেন্ডার সমতা ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পাড় রোধে কাজ করেছে।
শিক্ষা মানে সুরক্ষা- শিশুরা পড়াশুনায় থাকলে বাল্যবিবাহের ঝুঁকি তত কম থাকে। কমিউনিটির মতামত গুরুত্বপূর্ণ- মুক্ত আলোচনা থেকেই পরিবর্তনের শুরু। আইনের প্রয়োগ- সম্মিলিত সচেতনতা আইনের প্রয়োগকে কার্যকর করে। এই মূল বার্তা নিয়ে ২৬ই মে সোমবার কে. বি. ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেমরতা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বৈটপুর মমিন উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বৈটপুর ভদ্রপাড়া জামালিয়া দাখিল মাদ্রাসা মোট ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা, সহায়তা এবং ক্ষমতায়নের কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যালয় প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং কমিউনিটি নেতারা ঐক্যবদ্ধ করা। বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে কমিউনিটিকে সচেতন করা, প্রাসঙ্গিক আইন ও নীতি সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি করা পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সভায় অংশগ্রহণকারীগণ।
বাল্যবিবাহ সম্পর্কে ধারণা। বিবাহের রাষ্ট্র নির্ধারিত বয়স, অধিকার এবং ঝুঁকি (স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করা হয় এ সভায়। বাল্যবিবাহের কুসংস্কার বনাম সঠিক তথ্য। বিলম্বিত বিবাহে শিক্ষার ভূমিকা। পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সহায়তা। স্থানীয় হেল্পলাইন এবং আলাপন হেল্পলাইন এর সেবা সম্পর্কে আলোচনা হয় এ সভায়।
এসভার মাধ্যমে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি। স্কুল ও কমিউনিটির মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ ও আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক তৈরি। ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট পথ তৈরি। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, এমন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই আশা করছেন অংশগ্রহণকারীগণ।
এই ধরনের কমিউনিটি এনগেজমেন্ট কার্যক্রম বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী সামাজিক বার্তা প্রদান করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হলে তারা নিজেরা যেমন এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারবে, তেমনি পরিবার ও সমাজকেও সচেতন করতে পারবে। ভবিষ্যতে এমন কার্যক্রম আরও বিস্তৃত আকারে পরিচালনার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ নির্মূলের পথে বড় অগ্রগতি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাগেরহাট জেলায় এই কার্যক্রমটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্কুল, পরিবার এবং সমাজের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এমনটাই মনে করেন অলোচকবৃন্দ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এস, এম, ছায়েদুর রহমান জেলা শিক্ষা অফিসার বাগেরহাট। মোঃ সাদেকুল ইসলাম, সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার, বাগেরহাট। ডা. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, ফিল্ড অফিসার, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ। শেখ মারুফ হোসেন, ফিল্ড অফিসার, সিডব্লিউএফডি, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক, অভিভাবক, সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিসহ প্রমুখ।