মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০২ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি:

মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা

নিজস্ব প্রতিবেদক" / ১০ বার
আপডেট সময় : রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসব মুখর পরিবেশে আজ রোববার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামীকাল সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী, বুধবার মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিজয় দশমী পূজার পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব। এই বছর খুলনায় মোট ৯৮১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদ্যাপন হবে। এর মধ্যে শহরে ১২০টি মণ্ডপে এবং সারাদেশে প্রায় ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে।”
গত ২১ সেপ্টেম্বর রোববার মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলছে দেবী পক্ষ। অশুভ শক্তির নাশ এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে দেবী দুর্গাকে দুর্গতি নাশিনী বলা হয়। মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন তাকে মহিষাসুর মোদিনী বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার খুলনা জেলাসহ সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।”

অন্যদিকে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় খুলনাতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী, বিজিবি’র টহল জোরদার, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

দুর্গাদেবী এবার গজে আগমন করবেন এবং দোলায় গমন করবেন। এই ৫ দিন প্রতিটি মন্দিরে পূজা-অর্চনা, সন্ধ্যা আরতি, ধর্মীয় আলোচনা ও প্রসাদ বিতরণ করা হবে। মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শকদের ভীড় পরিলক্ষিত হবে। ইতোমধ্যেই প্রতিমা তৈরির ও মন্দিরের সাজ-সজ্জার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।”
জানা যায় পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মাদেবের তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন যে, তাকে কেউই যুদ্ধে তাকে পরাজিত করতে পারবে না, তবে নারীর হাতে তার মৃত্যু হবে। ব্রহ্মার বরে বলিয়ান হয়ে মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ আক্রমণ করেন। দেবরাজ ইন্দ্রের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য দখল করেন। মহিষাসুরের অত্যাচারে অবশেষে সকল দেবতা বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বিষ্ণু ও শিব দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের কথা শুনে ক্রোধান্বিত হন। তাদের তেজদীপ্ত ক্রোধে আবির্ভূত হলেন দশভূজা শ্রীশ্রী দুর্গা দেবী। তেজময়ী দেবীকে দেবতারা একে একে তাদের অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তুললেন রণাঙ্গিনী মূর্তিতে। মহাদেব দিলেন তাঁর শূল, বিষ্ণু দিলেন সুদর্শন চক্র, দেবরাজ ইন্দ্র দিলেন বজ্র, যমরাজ দিলেন কালদণ্ড, পবনদেব দিলেন ধনুক ও বানপূর্ণ তৃণ, বরুণদেব দিলেন শঙ্খ, হিমালয় পর্বত প্রদান করলেন বাহনরূপে একটি সিংহ। দেবীদুর্গা দেবতাদের অস্ত্র ও নানা অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে রণভূমিতে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে দেবী দুর্গা পরাজিত করলেন। অবশেষে মহিষাসুর নিজে আসলেন যুদ্ধে। যুদ্ধে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে শূল দিয়ে বিদ্ধ করলেন। মৃত্যুমুখে মহিষাসুর মা দুর্গা দেবীর কাছে বরপ্রাপ্ত হন যে, শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর সঙ্গে যেন তার পূজা হয়। শ্রীশ্রী দুর্গাদেবী মহিষাসুরকে বর দেন, পূজা দেবতাদের জন্য তোর মত অসুদের জন্য নয়, তবে আমার সঙ্গে মত্তবাসী তোর পূজা করবে তবে দেবতা জ্ঞানে নয় অসুর জ্ঞানে। বসন্তকালে পঞ্চমী তিথিতে বাসন্তি পূজা নামে এ পূজা অনুষ্ঠিত হতো।
এদিকে বাল্মিকী মুনির রামায়ন থেকে জানা যায়, অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র পিতৃসত্য পালনে স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষনসহ ১৪ বছর বনে বাস করেন। এ সময় লঙ্কার রাজা দশানন (রাবন) সীতাকে হরণ করেন। সীতা উদ্ধারের জন্য রাবনকে বধ করার সময় শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে উত্তরায়নে অকাল বোধন করে শ্রীশ্রী দুর্গা পূজার আয়োজন করেন।
বৈদিক মতে জানা যায়, উপমহাদেশে দুর্গাপূজা শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দিতে রাজশাহী জেলার তাহিরপুরে। কুল­কভট্টের পুত্র রাজা কংস নারায়ণ মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে তৎকালীন আট লক্ষ টাকা ব্যয় করে শরৎকালে প্রথম সাড়ম্বরে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। পরবর্তীতে ভাদুরিয়ার রাজা জগৎ নারায়ণ নয় লক্ষ টাকা ব্যয় করে বসন্তকালে দুর্গাপূজা করেন। নদীয়ার বিখ্যাত রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র ও রাজা নবকৃষ্ণ দেব দুর্গাপূজা করেন। বৃটিশ শাসনামলে কলকাতায় ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০৪ সালে বেলুর মঠে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রবর্তন করেন। এ ভাবেই উপমহাদেশে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রচলন লাভ করেছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে। মহানগরী ছাড়াও সকল উপজেলায় ব্যাপক উৎসব মুখর পরিবেশে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজার সময় সবাই নতুন জামা কাপড় পরিধান করে মাকে দর্শন করেন। বিজয় দশমীর দিনে বধূরা সিঁদুর উৎসবের আয়োজন করেন। দেবী দুর্গাকে সিঁদুর ও মিষ্টি মুখ করে বিদায় জানাবে। দুর্গাপূজা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও রূপসা মহাশ্মশান শ্মশানকালি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার নাথ এ প্রতিবেদককে বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ রোববার শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যে সকল মন্দিরে প্রতিমা নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেন কোন কুচক্রি মহলের দ্বারা বিঘœ না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। smk


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০  
এক ক্লিকে বিভাগের খবর