মোজাম্মেল হকসহ সাবেক ৭ মন্ত্রী ও ২২ ভিআইপির মুক্তিযোদ্ধা সনদ তলব

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ সাত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’র অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সাত মন্ত্রী ছাড়াও আ’লীগের দুই সংসদ সদস্য, একজন বিচারপতি, সাবেক সচিব, আইজিপি, সেনা কর্মকর্তাসহ আরো ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার তথ্য-উপাত্তও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”
এই ২২ ভিআইপি মুক্তিযোদ্ধার যাবতীয় তথ্য-প্রমাণসহ আগামী ৭ জুলাই জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) হাজির থাকতে বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব প্রভাবশালী ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিল করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা যায়, স¤প্রতি অভিযুক্ত প্রভাবশালী ২২ জনকেই চিঠি দিয়েছে জামুকা। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক আমির হামজার সই করা চিঠিতে বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম শুরু করেছে জামুকা। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের গণ্যমান্য হিসেবে পরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জামুকার ৯৫তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ অবস্থায় আপনার মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কিত উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণসহ আগামী ৭ জুলাই বেলা ১১টায় জামুকার সভাকক্ষে নিজে/উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপকমিটির সম্মুখে উপস্থিত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হলো। জানতে চাইলে জামুকার মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শাহিনা খাতুন বলেন, ‘এই ২২ জনের তথ্য-প্রমাণ যাচাই করতে জামুকার সদস্যদের সমন্বয়ে দু’টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপ-কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাতিল হতে পারে তাদের মুক্তিযুদ্ধের গেজেট ও সনদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট সংক্রান্ত নথিপত্র তদন্ত করা হচ্ছে তারা হলেন শেখ হাসিনার সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক আইনমন্ত্রী এড. আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান ও টিপু মুনশি এবং সাবেক সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন। এ তালিকায় আরো রয়েছেন আ’লীগের দুই সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন ও মীর শওকত আলী বাদশা, সাবেক সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন, অতিরিক্ত সচিব তড়িৎ কান্তি রায় ও গোপালগঞ্জের তরুণ কান্তি বালা, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক আইজিপি আবদুর রহিম খান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেঃ জেনারেল মোলা ফজলে আকবর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির, ক্যাপ্টেন আনারুল ইসলাম (মিরপুর ক্যাম্প), সাবেক কর কমিশনার ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শাহ সালাউদ্দিন, ফেনীর শফিকুল বাহার মজুমদার ও সালেহ উদ্দিন চৌধুরী এবং রংপুর আলমনগরের আবদুস সোবহান খান।”
গত ১৩ এপ্রিল জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের সভাপতিত্বে জামুকার ৯৫তম সভা হয়। সেখানে বলা হয়, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ দেশের বিশিষ্ট ২২ ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই ২২ জনের এ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করতে তাদের তথ্য-প্রমাণাদি যেমন-তাদের আবেদন, তদন্ত প্রতিবেদন, সভার কার্যবিবরণী, গেজেট ও অন্যান্য প্রামাণিক তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।”
তাদের মধ্যে চারজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য সেনা সদর দপ্তরের কেন্দ্রীয় রেকর্ডস অফিসে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব প্রভাবশালী ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিল করা হবে।”
বিভিন্ন সরকারের আমলে পাঁচবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা হয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় কমিটি এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশ করে। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের করা তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৮৯২। ১৯৯৪ সালে করা তৃতীয় তালিকায় ৮৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে চতুর্থ তালিকায় এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৫২ জনের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়।#smk