শীতের দিনে বাথরুমে হার্ট অ্যাটাকের পেছনে অন্যতম কারণ হলো
শীতের সময় অনেকেই ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করাকে স্বাভাবিক অভ্যাস মনে করেন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, শীতকালে অত্যন্ত ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে শরীরের ওপর এমন চাপ তৈরি হয় যা হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে- বিশেষত বয়স্ক, অসুস্থ বা হৃৎরোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে।
শীত যত বাড়ে, ততই মানুষের শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন দেখা যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে দেহের রক্তনালীগুলো স্বাভাবিকভাবেই সংকুচিত হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় হঠাৎ ঠান্ডা পানি শরীরে পড়লে এই সংকোচন আরও তীব্র হয়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, দম বন্ধ লাগা, ক্লান্তি কিংবা রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত চাপ হার্ট অ্যাটাকের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, শীতের দিনে বাথরুমে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা তুলনামূলক বেশি দেখা যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো হঠাৎ ঠান্ডা পানির এই ‘শক’।
ভারতের ফোর্টিস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. করুণ বেহাল জানান, ঠান্ডা ও গরমের আকস্মিক পার্থক্য হার্টের ওপর শক্তিশালী চাপ ফেলে। রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে অনিয়মিত হৃদ্স্পন্দন বা অ্যারিথমিয়া তৈরি হতে পারে, যা বড় ধরনের কার্ডিয়াক অ্যাটাকের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
গোসলের পানি খুব ঠান্ডা হলে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাঁপুনি, লোম খাড়া হওয়া এবং রক্তসঞ্চালন দ্রুত হওয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করতে সহায়তা করলেও হার্টের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। সুস্থ ও তরুণদের ক্ষেত্রে শরীর এ চাপ সামলাতে পারে, কিন্তু বয়স্ক, দুর্বল বা হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি বিপজ্জনক।”
তবে ঠান্ডা পানির গোসল পুরোপুরি নেতিবাচক নয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়ে, ক্যালোরি খরচ হয় এবং কিছু মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও উন্নত হয়। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ২৯ শতাংশের অসুস্থতার হার কমতে দেখা গেছে। কিন্তু এই উপকারিতা কেবল শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ ফিট মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।”
চিকিৎসকরা তাই সতর্ক করে বলেন- যদি কেউ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাহলে শীতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। খুব ঠান্ডা বা খুব গরম পানি- দুটোই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কুসুম গরম, অর্থাৎ না খুব গরম না খুব ঠান্ডা- এমন পানি দিয়ে গোসল করা সবচেয়ে নিরাপদ। পাশাপাশি গোসল শুরু করার সময় শরীরে হঠাৎ পানি না ঢেলে ধীরে ধীরে হাত পা ভিজিয়ে নেওয়াই উত্তম।
শীতে হার্টের ঝুঁকি কমাতে কিছু করণীয়:
- পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ করে ভিটামিন-ডি বজায় রাখা
- নিয়মিত হালকা ব্যায়াম
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় বাইরে না যাওয়া
- উষ্ণ পোশাক ব্যবহার
- হালকা ও সুষম খাবার খাওয়া
- হৃদ্রোগের রোগীরা নিয়মিত ওষুধ সেবন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মানা
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস#bl












